Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
আপনার সন্তানের জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সম্পূর্ন করুন।
Details
কোনো কোনো কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দিবস পালন করা সারা বিশ্বেই একটি প্রচলিত পদ্ধতি হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও নানান দিবস পালনের মত ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছরের ৩ জুলাইকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জন্মনিবন্ধন দিবস পালিত হয়ে আসছে। সেই ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৩ সালে বাংলায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন জারি হলেও আপামর জনসাধারণের ও রাষ্ট্রীয় অনাগ্রহতায় তা সফল হতে পারেনি। বিশ্বব্যাপী জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম গুরুত্বলাভ করায় ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশেও নতুন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম আরম্ভ হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন এবং ২০০৬ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালাসমূহ জারি হয়। সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তিমূলে ২০০৬ সালের ৩ জুলাই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ কার্যকর করলে প্রতি বছর ঐ দিনটি জন্ম নিবন্ধন দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এবারে জন্ম নিবন্ধন দিবসের প্রতিপাদ্য হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে শিশুর জন্মের পর প্রয়োজন, ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন।

 

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ এর-৮ ধারা অনুযায়ী জন্ম বা মৃত্যুর ঘটনার ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সারাদেশে এযাবত্ ১৪ কোটি ৫৮ লক্ষের বেশি মানুষের জন্মনিবন্ধন হলেও জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধনের হার তুলনামূলকভাবে ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি। পাসপোর্টের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ আর জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করায় প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সকলেই জন্মনিবন্ধনের আওতায় এসেছেন। ২০০৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র করা রয়েছে এই কারণ দেখিয়ে অল্পকিছু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এখনো জন্মনিবন্ধন করাননি। কিন্তু শিশুদের, বিশেষ করে বিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে জন্মনিবন্ধনের প্রবণতা খুবই কম।

 

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পের নিজস্ব ডাটাবেইজের তথ্যানুসারে ২০১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ২০১৬ এর ৫ মে পর্যন্ত জন্ম গ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে যথাক্রমে ০.২৯, ০.৬৯. ১.৪৩, ২.০৭, ২.৩২ ও ২.১৯ শতাংশ শিশুর জন্ম নিবন্ধন জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি শিশু যেখানে জন্মের ৪২ দিনের মধ্যে ইপিআই-এর প্রথম ডোজ টিকা লাভ করে সেখানে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে ২ শতাংশের ঘরে শিশুর জন্ম নিবন্ধন কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

 

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ব্যক্তির জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় রাষ্ট্রের জন্য। জনসংখ্যার বয়সভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের জন্য খুবই জরুরি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, প্রভৃতি বিষয়ে নীতি নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রকে সবসময়ই বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার উপর নির্ভর করতে হয়। হালনাগাদ তথ্য না থাকলে সিদ্ধান্ত অনেক সময়ই পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে। তাই আধুনিক রাষ্ট্র জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের উপর অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করছে। ২০১৪ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে এক পরিপত্র জারি করে। উক্ত পরিপত্রে শিশুর ইপিআই কার্ডে ও ইপিআই রেজিস্টারে শিশুর জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকার দিনে জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে অনলাইনে বা হাতে লিখে ইপিআইকর্মীগণকে শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদন তৈরিতে সহায়তা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর জন্ম নিবন্ধন বাড়েনি।

 

দেশের বেশ কিছু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নিজস্ব উদ্যোগে প্রায় শতভাগ শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করছে। ভৈরব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পার্বতীপুর পৌরসভা এবং বেরইলপলিতা, এম. বালিয়াতলী, পাথরঘাটা প্রভৃতি ইউনিয়ন পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত উত্সাহ ও আগ্রহের কারণে এই সফলতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে।

 

যথাসময়ে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রায়োগিক ব্যবহারের অপ্রতুলতা। ২০১০ সাল হতে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ যাত্রার প্রায় ৭ বছর চললেও শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্যাদি এখনো মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতেই পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহার থাকলেও সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআইকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা হয়নি। ইপিআই কর্মসূচিকে তথ্য প্রযুক্তির আওতায় আনা হলে শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর লিখেই শিশুর সকল মৌলিক তথ্য স্থানান্তর করে বিনিময়যোগ্য তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা যাবে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা ভবিষ্যতে জাতীয় জনসংখ্যা তথ্যভাণ্ডার গঠনের পথে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারবে।

 

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক। ২০১১ সালের গোড়াতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে। এই নির্দেশনার ভিত্তিতে বিদ্যালয়সমূহ ভর্তির সময় ঠিকই জন্ম নিবন্ধন সনদ নিচ্ছে তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সময় জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী না করে ভিন্নরূপ জন্ম তারিখ লিখে চলেছে। ফলে সমাপনী পরীক্ষার পর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় শিশুদের নাকাল হতে হয়। শিশুদের নাকাল হওয়া থেকে রক্ষা করতে, প্রথম থেকেই শিশুর নাগরিক অধিকার বজায় রাখতে ও রাষ্ট্রের সঠিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে শিশুর জন্মের পরপরই সঠিকভাবে জন্ম নিবন্ধন করা একান্ত জরুরি। সেই সঙ্গে আরো জরুরি সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য ডিজিটালভিত্তিক হওয়া। যত দ্রুত আমরা এসব করবো তত দ্রুত শিশু তার জন্মগত অধিকার লাভে নিশ্চয়তা পাবে।
* দৈনিক ইত্তেফাক
Attachments
Image
Publish Date
28/04/2018
Archieve Date
01/10/2018